
ঈশ্বরগঞ্জের সাইকেল বালিকায় বদলে যাচ্ছে গ্রামের শিক্ষা
মোস্তাফিজুর রহমান, ঈশ্বরগঞ্জ (সমকাল) প্রতিনিধিঃ রওনক জাহান স্মৃতি অষ্টম শ্রেণিতে প্রথম হওয়ায় পুরস্কার হিসেবে উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি সাইকেল উপহার পেয়েছিল। তার হাত ধরেই প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলটিতে সাইকেলে চড়ে পাঠ নিতে আসতে শুরু করে মেয়েরা।
দূরের রাস্তা ও রাস্তায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার কারণে যেসব মেয়ে স্কুলে যেতে পারত না, তারাও সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। এতে বদলে যাচ্ছে গ্রামের শিক্ষার পরিবেশ। অদম্য সাইকেল বালিকাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামের শিক্ষালয়টি।
তারুন্দিয়া ইউনিয়নের সাখুয়া আদর্শ বিদ্যানিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়টি উপজেলা সদর থেকে প্রায় সতেরো কিলোমিটার দূরে। বিদ্যালয়টির আশপাশের তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো স্কুল নেই।
১৯৯০ সালে স্থাপিত ব্রহ্মপুত্র নদের কাছাকাছি বিদ্যালয়টিতে ঈশ্বরগঞ্জ ও গৌরীপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের অন্তত ৯৫০ শিক্ষার্থী শিক্ষা নিতে যায়। এর মধ্যে বর্তমানে ছাত্রীর সংখ্যাই বেশি। দুই বছর আগেও প্রত্যন্ত গ্রামের শিক্ষালয়টিতে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছেলেদের তুলনায় কম ছিল। গ্রামের মানুষ মেয়েদের দূরের স্কুলে পাঠাতে ভয় করতেন।
রাস্তায় উত্ত্যক্ত হওয়া বা হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ায় মেয়েরাও স্কুলে যেতে অনীহা প্রকাশ করত। কিন্তু গত দুই বছরে পাল্টে গেছে সেই পরিবেশ। এখন গ্রামের অন্তত ৮০ মেয়ে সাইকেল চালিয়ে তাদের বিদ্যালয়ে পাঠ নিতে যায়। এতে রাস্তায় উত্ত্যক্তের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা এবং বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার সময় কম লাগছে ছাত্রীদের।
সাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুবিধা পাওয়া বিদ্যালয়টিতে বাড়ছে সাইকেল বালিকার সংখ্যাও। গ্রামের অভিভাবকরাও মেয়েকে সাইকেল দিয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষা নিতে পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন। এতে পাল্টে যাচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামের নারী শিক্ষার পরিবেশ। মেয়েদের অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে বিদ্যালয়ের দূরত্ব। সমাজের ভয়, চাপিয়ে দেওয়া প্রথা আর লজ্জা ভেঙে এখন সাইকেলের প্যাডেলের মতো এগিয়ে যাচ্ছে গ্রামের মেয়েরা।
ক্রিং ক্রিং সাইকেলের শব্দে গ্রামের মেঠোপথ বেয়ে ছুটে চলা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্প্রতি কথা হয় তাদের বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ে প্রথম সাইকেলের আগমন ঘটায় রওনক জাহান স্মৃতি। সে বর্তমানে দশম শ্রেণিতে পড়ে। বিদ্যালয় থেকে দুই কিলোমিটার দূরের পলাশকান্দা গ্রামের স্মৃতি অষ্টম শ্রেণিতে প্রথম হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন তাকে একটি সাইকেল উপহার দেয়।
স্মৃতি জানায়, সাইকেল পাওয়ার পর সে চালানো শেখে। পরে একদিন স্কুলে আসার পর রাস্তায় নানা ধরনের মন্তব্য শুনতে হয়। কিন্তু শিক্ষকরা উৎসাহ দেওয়ায় সাইকেল দিয়েই স্কুলে আসতে শুরু করে সে।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হাসিম উদ্দিন বলেন, মেয়েরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসায় অভিভাবকরাও এখন উৎসাহী হচ্ছেন। মেয়েদের সাইকেল কিনে দিয়ে স্কুলে পাঠাচ্ছেন।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ছাত্রীদের সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসার আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে। প্রত্যন্ত গ্রামে সাইকেলের ব্যবহার বাড়ায় মেয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় আগ্রহ বাড়ছে।
তারুন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হালিম বলেন, নারীদের ছাড়া কোনো জাতির অগ্রগতি সম্ভব নয়। প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েরা শিক্ষা গ্রহণ করায় গ্রামের পরিবেশ পাল্টে যাচ্ছে। শিক্ষার অগ্রগতিতে সাইকেল মেয়েদের ঝরে পড়া রোধে কাজ করছে।