ঈশ্বরগঞ্জ কলেজের সামনে কাফনের কাপড় পড়ে মানববন্ধন

ঈশ্বরগঞ্জ কলেজের সামনে কাফনের কাপড় পড়ে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষক কর্তৃক ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ৩৩ শিক্ষার্থীর বহিষ্কার প্রত্যাহারের দাবীতে কাফনের কাপড় পড়ে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে ঈশ্বরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে ঘন্টাব্যাপি ওই কর্মসূচী পালন করে।

জানা যায়, ঈশ্বরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ডিগ্রি প্রথম বর্ষ পরীক্ষায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ(বিবিএস) থেকে ৮৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। নান্দাইল শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজের ভ্যানুতে পরীক্ষা দেয় শিক্ষার্থীরা। গত ৩১ জানুয়ারি ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ফলাফল প্রকাশ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

কিন্তু ফলাফল প্রকাশের আগে ২৩ জানুয়ারি ৩৩ পরীক্ষার্থীর নামে কৈফিয়তপত্র পাঠানো হয়। মার্কেটিং দ্বিতীয়পত্র বিষয়ের পরীক্ষায় শৃংখলা পরিপন্থী আচরণ করায় পরীক্ষক কর্তৃক বহিস্কৃত করা হয়। পরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না পত্র প্রাপ্তির ১০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর লিখিত ভাবে জানতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই চিঠি পাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা নির্দোশ দাবি করে ২৮ জানুয়ারি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর চিঠি পাঠায়।

কিন্তু ৩১ জানুয়ারি ডিগ্রি প্রথম বর্ষের প্রকাশিত ফলাফলে ৩৩ শিক্ষার্থীর ফলাফল আসেনি। ওই অবস্থা দেখে ৩৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে শুরু হয় চরম হতাশা ও অনিশ্চিয়তা। এরই প্রেক্ষিতে ৩৩ শিক্ষার্থীর বহিষ্কার প্রত্যাহার ও সঠিক বিচারের দাবীতে গতকাল বৃহষ্পতিবার বেলা ১ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে ঈশ্বরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে কাফনের কাপড় পড়ে ঘন্টাব্যাপি মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

এসময় ছাত্রছাত্রীরা “আমাদের দাবী মেনে নাও, নইলে মুখে বিষ দাও” শ্লোগানে কলেজ প্রাঙ্গণ এবং মহাসড়কে বিক্ষোভ করলে ঈশ্বরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম খানের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি স্মারক লিপি প্রদান করা হয়।

কৈফিয়ত পত্র পাওয়া শিক্ষার্থীরা জানায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুলে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দ্রুত তাদের সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ না করলে কঠোর কর্মসূচি দিবে।

ঈশ্বরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের উপাধ্যক্ষ মাসুদুল হক বলেন, ৮৩ জন পরীক্ষা দিলেও ৫০ টি করে খাতা বান্ডেল করা হয়। সে জন্য বাকি ৩৩ টি খাতার জন্য আলাদা একটি বান্ডেল করা হয়। ৮৩ জনের মধ্যে ৫০ জনের ফলাফল এলেও ৩৩ জনের ফলাফল আসেনি। তাদের নামে কৈফিয়ত পত্র পাঠানো হয় ফলাফল প্রকাশের কয়েকদিন আগে। সেখানে মার্কেটিং বিষয়ের পরীক্ষা অসদুপায় অবলম্বন করায় কেন তাদের বহিস্কার করা হবে না মর্মে জবাব চাওয়া হয়।

তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শিক্ষার্থীদের খাতা দেখা ও ওয়েমার শীটে নম্বর তোলা ছিলো। ওই অবস্থা দেখে পরীক্ষক শিক্ষার্থীদের বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। উপাধ্যক্ষ বলেন, এখানে শিক্ষার্থীদের কোনো দায় নেই। ভুল ক্রমে ৩৩ টি খাতা সঠিক পরীক্ষকের কাছে না গিয়ে অন্য কোথাও মূল্যায়িত হতে পারে। পরে সঠিক মূল্যায়ন করতে গিয়ে খাতা মূল্যায়ন করা দেখে শিক্ষার্থীদের বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয় পরীক্ষক।

নান্দাইল শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নাজিম উদ্দিন বলেন, ধারণা করা হচ্ছে ৩৩ টি খাতা ভুল ক্রমে অন্য কোথাও মূল্যায়ন হতে পারে। পরে সঠিক মূল্যায়ন করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষক নম্বর দেওয়া দেখতে পান। তিনি বলেন, ওয়েমার শীটে নম্বর পূরণ করা থাকার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের ভুলে হতে পারে। এবিষয়ে কন্ট্রোলারের সাথে কথা বলা হয়েছে। আগামি ১৩ ফেব্র“য়ারি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখানে পরীক্ষা কেন্দ্রের কোনো ত্র“টি নেই।

ঈশ্বরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসলাম খান জানান, কলেজের পক্ষ থেকে একটি আবেদন করা হয়েছে। আগামি ১৩ ফেব্র“য়ারি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ বিষয়টি তদন্ত করে সুরাহা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব কুমার সরকার জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপিটি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যাতে সঠিক তদন্ত করে এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *