
ঈশ্বরগঞ্জে কিশোরীকে তুলে নিয়ে বিয়ে করলেন ৩ স্ত্রী ওয়ালা গ্রাম পুলিশ
ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশের সদস্য আবু তাহেরের বিরুদ্ধে নবম শ্রেণি পড়ূয়া এক কিশোরীকে তুলে নিয়ে বিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মেয়েটির বাবা। তাহের (২৭) পানান গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, আবু তাহের গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী ওই মেয়েটিকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন। স্কুলের কাগজপত্রে মেয়েটির জন্মতারিখ ২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। তবে ওই ছাত্রীর নামে গত ৩ ফেব্রুয়ারি জাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নতুন জন্মনিবন্ধন ইস্যু করানো হয়। তাতে তার বয়স বাড়িয়ে দেখিয়ে আবু তাহের মেয়েটিকে বিয়ে করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জন্মনিবন্ধনটির আবেদন পত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যের প্রত্যয়ণ করার বিধান থাকলেও এটির ক্ষেত্রে পানান ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ হযরত আলী ও ইউপি সদস্যের কলামে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের স্থলে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম প্রত্যয়ণ করেছেন। তাদের স্বাক্ষরের ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নতুন একটি জন্মনিবন্ধন করা হয়। কিশোরী মেয়েটিকে তুলে নিয়ে ওই জন্মনিবন্ধন দেখিয়ে গ্রাম পুলিশের সদস্য মো. আবু তাহের বিয়েও করেছে বলে জানা গেছে।
গ্রাম পুলিশের সদস্য মো. আবু তাহেরের এমন কাজের জন্য ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আবদুল গণি জানান, আবু তাহের ইতোপূর্বে আরো তিনটি বিয়ে করেছে। তার একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। বাল্যবিয়ে নিরোধে কাজ করার কথা থাকলেও সরকারি কর্মী হয়ে নাবালিকা মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে। তার ওয়ার্ডের বাসিন্দা হলেও অন্য ওয়ার্ডের মেম্বার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও চেয়ারম্যান জন্মনিবন্ধন বানিয়ে দিয়েছে। এ প্রক্রিয়াটির সাথে অনেকের সম্পৃক্ততা রয়েছে। জড়িতদের সকলের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
পানান ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ হযরত আলী বলেন, তিনি ব্ল্যাক মেইলের শিকার হয়েছেন। গ্রাম পুলিশের সদস্য এসে নিজের মেয়েকে ভর্তির জন্য জন্ম নিবন্ধন করার কথা বললে তিনি ফরমে স্বাক্ষর করে দেন। ওই সময় ফরমে নাম-ঠিকানা কিছুই লেখা ছিল না।
কিন্তু পরে জানতে পারেন ওই জন্মনিবন্ধন ফরমটি দিয়ে জন্মনিবন্ধন বানিয়ে একটি মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে সে।’
৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর সম্বলিত কাগজ তাকে দেখানোর পর তিনি কাগজটিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। কাগজে মেয়েটির নাম ছাড়া অন্য কোনো তথ্য ছিল না।
জাটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল হক ঝন্টু জানান, গ্রাম পুলিশের সদস্য আবু তাহের একটি মেয়েকে নিয়ে বিয়ে করেছে বলে শুনেছেন। মেয়েটির নামে তিনি জন্মনিবন্ধন সনদ দেননি। তার স্বাক্ষর জাল করা হতে পারে।
গ্রাম পুলিশ আবু তাহের জানান, তিনি এর আগে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু স্ত্রী চলে গেছে। মেয়েটির সঙ্গে তার বেশ কিছুদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছে। মেয়েটিকে বিয়ে না করলে সে আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি দেওয়ায় তারা দু’জন বিয়ে করেছেন।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার এসআই আক্তারুজ্জামান বলেন, অভিযোগটি তিনি তদন্ত করছেন। মেয়েটিকে উদ্ধারে তারা চেষ্টা করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান যদি প্রতিবেদন পাঠান, তাহলে ওই গ্রাম পুলিশকে বহিস্কারসহ বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।