ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমনে দিশেহারা কৃষক

ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমনে দিশেহারা কৃষক

ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ঈশ্বরগঞ্জে চলতি মৌসুমের রোপা আমন ধানে মাজরা পোকা, বাদামী গাছ ফড়িং (বিপিএইচ), পাতা মোড়ানো, খোলপঁচা রোগসহ ইঁদুরের আক্রমনে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ভরা মৌসুমে বৃষ্টি অভাবে বিলম্বিত আবাদে অধিক খরচের পরও রোগ বালাইয়ের আক্রমনে উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হবে কী না তানিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় ১৯হাজার ১২৫হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধরণ করা হয়। আবাদকৃত জমির অধিকাংশ ধান এখন থোর আসার পথে।

সরেজমিন কৃষকদে সাথে কথা বলে জানা যায়, রোগ-বালাই দমনে চড়া মূল্যে কিটনাশক দিয়েও কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছেন না তারা। ভূক্তভোগি কৃষকদের অভিযোগ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার উদাসিনতার কারণে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের তদারকীর অভাবে ফসল রক্ষায় সঠিক পদক্ষেপ নিতে পাছেনা তারা। বাধ্য হয়ে অনেকই স্থানীয় কীটনাশকের দোকান থেকে ওষুধ কিনছেন কিন্তু প্রয়োগের পর সুফল মিলছেনা বলে দাবী করেন। অনেক এলাকায় ইঁদুর তারাতে ও ফড়িংয়ের আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে বাঁশের কঞ্চির সাথে পলিতিন বেঁধে জমিতে পোতে দিচ্ছেন কৃষকরা। উপজেলা প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই ধান জমিতে একই অবস্থা বিরাজ করছে।

ঈশ্বরগঞ্জ ইউনিয়নের চরপুবাইল গ্রামের কৃষক আবুল কালাম জানান, জমিতে এপযর্ন্ত রোগ-বালাই দমনে ৮ হাজার টাকার ওষুধ দেওয়ার পরও কোন কাজ হচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করে জানান, এলাকায় এখন পযর্ন্ত পরামর্শ নিতে কোন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। একই গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম ও জসিম উদ্দিন অনুরুপ অভিযোগ করেন।

ওই ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মাঠে যাইনি একথা ঠিক নয়। তবে ধান জমিনে পোকার আক্রমন আছে।

রোববার মগটুলা ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদির অফিসে এসে উপজেলা কৃষি অফিসার নুছরাত জাহানের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমার পরিবারের প্রায় ২০একর জমির অধিকাংশই পোকায় আক্রান্ত। মাঠে কৃষি বিভাগের কোন কর্মকর্মাকে পাওয়া যাচ্ছেনা।

এবিষয়ে ওই ব্লকের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নারায়নপুর ব্লকটি আমার অতিরিক্ত দায়িত্বে, প্রয়োজনে আমার সাথে যোগাযোগ করতে কৃষকদের বলা হয়েছে।

উপজেলা হারুয়া গ্রামের সুরুজ আলী ফকির, মফিজ উদ্দিন ফকির, তাজুল ইসলাম, ধামদী গ্রামের জামাল ও জাটিয়ার আবুল হাসেম জানান, একদিকে পোকা অপরদিকে ইঁদুরের আক্রমনে তারা দিশেহারা।

দত্তপাড়া গ্রামের জহুর উদ্দিন, হযরত আলী, তাহের উদ্দিন, চরপুম্বাইলের গিয়াস উদ্দিন, বড়হিতের সাইফুল ইসলাম, মিরাজ আলী, আব্দুস সালাম, খলিলনগর গ্রামের বরকত উল্লাহ, আব্দুল কদ্দুছ জানান, ধান জমিতে পাতা মোড়ানো, খোলপঁচা রোগ ব্যাপক ভাবে দেখা দিয়েছে।

বড়হিতের এনামুল জানায়, তার জমিতে মাজরা ও বাদামীগাছ ফড়িং (বিপিএইচ) দেখা দেয়ায় উপ সহকারী আলী আখছার খানকে জানানোর পর তিনি ওষুধ দেয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।

সাখুয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, আমাদের এলাকায় প্রায় ৮০ভাগ জমিতে পোকা ও ইঁদুরের আক্রমন দেখা দিয়েছে। এলাকার দায়িত্বে থাকা মাঠ কর্মকর্তাকেও দেখা যায়নি।

তারুন্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রানা জানান, ইউনিয়ন পরিষদে কৃষি বিভাগের দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডের জন্য রুম বরাদ্দ থাকা স্বত্বেও তারা না আসায় এলাকার কৃষকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আঠারবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান জুবের আলম কবীর রূপক জানান, আমন ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে। দুইজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার মধ্যে একজন মাঝে মধ্যে আসেন।

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার নুসরাত জামান এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন বিক্ষিত ভাবে পোকার আক্রমন রয়েছে। আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও মাঠে কাজ করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *