
‘বহিস্কার’ ঘিরে বিতর্ক, সংকটে ঈশ্বরগঞ্জ আওয়ামী লীগ
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগে সংকট দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদকসহ দশ নেতার মৃত্যু হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পদের শূন্যতার মাঝে শীর্ষস্থানীয় তিন আওয়ামী লীগ নেতাকে ‘বহিস্কার’ করা হয়েছে। একটি অংশের আধিপত্য বজায় রাখা ও আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে প্রভাবিত করতে কৌশলে এমনটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বহিস্কার নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
২০০৩ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের ৬৭ সদস্যের কমিটি ঘোষণা হয়। এতে সভাপতি হয়েছিলেন সাবেক এমপি আবদুছ ছাত্তার ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন আবদুল হাকিম। ২০১৫ সালের দিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক হওয়ায় আবদুছ ছাত্তারকে উপজেলা আ’লীগের সভাপতির পদ ছাড়তে হয়।
ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সভাপতির দায়িত্ব পান সিনিয়র সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম বুলবুল। গত ২২ জানুয়ারি মারা যান উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম। তিনি ছাড়াও গত সতেরো বছরে কমিটির আরও নয়জন নেতার মৃত্যু হয়েছে। একজন প্রবাসী থাকায় কমিটির সদস্য দাঁড়িয়েছে ৫৬।
সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যুর পর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব পাওয়ার কথা। কিন্তু গত ২৬ জানুয়ারি কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন ও বজলুর রহমানকে বহিস্কার করা হয়েছে। কমিটির সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম, পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া আ’লীগের সদস্য বর্তমান মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস ছাত্তারকে বহিস্কার করা হয়। গত ২৮ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহমুদ হাসান সুমনকেও দলের সদস্যপদ থেকে বহিস্কার করা হয়। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ তুলে বহিস্কারের চিঠি ইস্যু করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যুতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীনের ওপর দায়িত্ব বর্তানোর সম্ভাবনা ছিল বেশি। তিনি যেন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব না পান, সে জন্য ষড়যন্ত্র করে ভুল বুঝিয়ে এমন চিঠি ইস্যু করা হয়েছে বলে দাবি করেন জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, বহিস্কার করার এখতিয়ার জেলা আওয়ামী লীগের নেই। এটি কেন্দ্রের এখতিয়ার।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান বলেন, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তারা ‘প্রতীক’ বাণিজ্যে কাঁটা হতে পারেন- সে কারণে জেলা নেতাদের প্রলুব্ধ করে এমনটি করা হয়েছে। তারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করছিলেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমন বলেন, জনপ্রতিনিধি হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেননি। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার নামে বহিস্কারের চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।
উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বুলবুল বলেন, দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করায় ২০ জনের নাম পাঠানো হয়েছিল। সে অনুযায়ী দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আপাতত কেন্দ্রকে জানিয়ে একজন সদস্য দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের কাজ চালানো হচ্ছে। পরে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, দলবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত কেউ পদে যেতে পারবে না। কেন্দ্রীয় ফোরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের বহিস্কার করা হয়েছে।