বাবাকে হারিয়ে সংসারের হাল ধরতে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি

বাবাকে হারিয়ে সংসারের হাল ধরতে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি

ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ “হাওয়াই মিঠাই লাগবে, হাওয়াই মিঠাই, মিষ্টি নরম গোলাপি হাওয়াই মিঠাই”এভাবেই হাক-ডাক দিয়ে হাওয়ায় মিঠাই বিক্রি করছে স্বাধীন । বয়স সবে মাত্র ১০ বছর। এই বয়সে তার বই,খাতা ও কমল হাতে স্কুলে যাওয়ার কথা। কিন্তু স্বাধীনের অভাব অনটনের সংসার। করোনা মহামারীর সময়ে আর চলছিলোনা তাদের সংসার । তখন থেকেই স্বাধীন শুরু করে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি।

স্বাধীন মায়ের পেটে থাকতেই তার বাবা (চান মিয়া) মারা গিয়েছিলেন। মা,ভাই-ভাবি ও এক ভাতিজী নিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার তাদের। বাবাকে হারিয়ে কষ্টে দিন চলে তার পরিবারের। তারপরও হাল ছাড়েনি। বড় ভাই সুজন শেয়ারে হাওয়াই মিঠাইয়ের ব্যবসা করেন। করোনার সময় লকডাউন ও দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতির কারনে বড় ভাইয়ের উপার্জিত টাকায় সংসার চলছিলো না। তখন ভাইয়ের সাথে স্বাধীন নেমে পড়েছিলো মিঠাই বিক্রি করতে।

স্বাবলম্বী হতে আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে এগুতে থাকে স্বাধীন। দিনে দিনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সাবলম্বী হয়ে ওঠার দিন গুনছেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহ ব্রীজ সংলগ্ন গোয়াতলা এলাকায়। বর্তমানে সে ও তার বড় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের পৌর এলাকার চরনিখলা গ্রামে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। শিশুদের অতি প্রিয় এ মিঠাই উপজেলার পৌর এলাকা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করে সে।

তাছাড়া প্রাথমিক, মাধ্যমিকসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার এলাকা, গ্রামে গ্রামে বা কোন মেলা উৎসব, সভাস্থলে চমকপ্রদ হাওয়াই মিঠাই নিয়ে হাজির হয় স্বাধীন। ১ পুটলি হাওয়াই মিঠাই দাম ১০ টাকা। প্রতিদিন ৫শ টাকা থেকে এক হাজার টাকা বিক্রি হয়। সেই টাকার পুরোটা মালিককে দিয়ে দেয়। বিনিময়ে চুক্তি ভিত্তিক প্রতি মাসে সে বেতন পায় ৬ হাজার টাকা। এভাবেই মিঠাই বিক্রি করে সংসার চালাতে থাকে। এখন তাদের সংসারে কিছুটা স্বচ্ছতা এসেছে।

স্বাধীন জানায় , আমি মায়ের পেটে থাকতেই আব্বার মৃত্যু হয়। বাবার স্নেহ পাইনি, করোনার সময় থেকে বড় ভাইয়ের ব্যাবসায় সহায়ক হিসেবে ঘুরে ঘুরে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করি। সবার মতো আমিও স্কুলে যেতাম। আমি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তাম। করোনার সময় আমাদের সংসারে অনেক অভাব দেখা দেয়। তখন খেয়ে বেঁচে থাকাই ছিলো কষ্টকর। স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় আমাকে পরিশ্রম করে এ ব্যবসা করতেই হচ্ছে। আমি আবার স্কুলে যেতে চাই। সুজন ভাইও বলেছে সামনের বছরে আমাকে আবার স্কুলে ভর্তি করাবে। আমি পড়াশোনা করে বড় হয়ে পুলিশ হতে চাই। দেশের মানুষের সেবায় কাজ করতে চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.