ঈশ্বরগঞ্জ থানা

ঈশ্বরগঞ্জে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি, তোপের মুখে ওসি

ঈশ্বরগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন চরম অবনতির দিকে যাচ্ছে। মাদক, চুরি, জুয়া ও টাকা নিয়ে কাউন্টার মামলা জটিলতায় ওই অবনতি হয়। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ভার্চুয়াল মিটিংয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি, ইউপি চেয়ারম্যান ও সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন ওসি।

জানা যায়, পৌর সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাদক, চুরি, জুয়া ও মামলা জটিলতায় আইনশৃঙ্খলা চরম বাবে অবনতি হয়। যে কারণে দেখা যায় দেখা যায় মাদক কারবারিরা গাঝাড়া দিয়ে উঠছে এবং অবাধে বেচাকেনা চলছে এমন অবস্থায় পুলিশের কোন ভূমিকা না থাকায় সবার কাছে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। মাদক কারবারিরা উন্মুক্ত ভাবে কেনাবেচা করছে বিধায় ধ্বংস হচ্ছে ঈশ্বরগঞ্জে যুব সমাজ।

অপরদিকে পৌর এলাকাসহ উপজেলার বেশ কয়েকটি স্পটে চলছে অবাধে জুয়ার আসর, সেখানে পুলিশের কোন তৎপরতার না থাকায় এবং পুলিশের কাছে অভিযোগ দেওয়ার পরও কোন অভিযান বা আটক না করায় উদ্বিগ্ন সকলেই। এরই মাঝে আবার শুরু হয় মোটরসাইকেল, দোকানপাট, বাসা বাড়ি ও মসজিদের তালা ভেঙ্গে দুঃসাহসিক অহরহ চুরি। এতে সাধারণ মানুষ আতঙ্ক গ্রস্থ হয়ে পড়েছে।

সাম্প্রতিক কালীন সময়ে উপজেলা সদর সহ আশপাশে সংঘটিত হওয়া ২০-২৫টি চুরির ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে সাধারণ মানুষকে। এসব চুরির ঘটনায় থানায় কয়েকটি জিডি নেয়া হলেও এপর্যন্ত পুলিশ কোন চুরির রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। যে কারণে আবাসিক ও ব্যবসায়ী মহলে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ৯আগস্ট চরহোসেনপুর রোডস্থ সাবেক ভিপি ফরিদ উদ্দিনের বাসার তালা ভেঙ্গে দুঃসাহসিক চুরি সংঘটিত হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় সমবেদনা জানাতে শিমরাইল গ্রামের পলাশ মিয়া তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল গেইটের সামনে যায় ভুক্তভোগীর বাসায়। বাসা থেকে বের হয়ে দেখেন তার মোটরসাইকেলটিও নেই।

১০আগস্ট সন্ধ্যায় ঈশ্বরগঞ্জ পশু হাসপাতাল রোডে ঈশ্বরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ফেরদৌস কোরাইশী টিটুর বাসার নিচের গ্যারেজে রক্ষিত জায়গা থেকে ঈশ্বরগঞ্জ প্রেসক্লাবের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ ও দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধি রুহুল আমিন রিপনের বাজাজ ডিস্কোভার ১০০সিসি মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায়।

সম্প্রতি টিএন্ডটি রোডে ডা. সামিউলের বাসার তালা ভেঙে, মার্কাজ মসজিদের সামনে থেকে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মোটর সাইকেল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।

এছাড়াও গঙ্গাময়ী মেডিকেল হল, খাজা ফার্মেসী, টিএন্ডটি রোডের সাবেক সেনা সদস্য লাল মিয়ার বাসা, শিমুলতলি এলাকার অবসর প্রাপ্ত পুলিশ সদস্য হেলাল উদ্দিনের বাসা, রবিনের ব্যটারির দোকান, জয়বাংলা মোড় নজরুল ও সাইফুল ইসলামের বাসা, মার্কাজ মসজিদ, বটতলা জামে মসজিদ, ঈশ্বরগঞ্জ আইডিয়াল কলেজ, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সাদুল্লাহ ওরফে শহিদুল ইসলামের বাসায়, থানা রোডের মায়ের দোয়া স্টোর, রিতা শপিং সেন্টারের শফিক বস্ত্রালয়, লোকনাথ বস্ত্রালয় ও রুদ্র স্টোরের তালা ভেঙ্গে দুর্ধর্ষ চুরি সংঘটিত হয়।

পৌর মেয়র মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুস সাত্তার জানান, পৌরসভা সহ উপজেলায় ব্যাপক হারে মাদক ব্যবসা, জুয়ার আসর বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন বাসাবাড়ি, দোকানপাট সহ প্রতিনিয়তই মোটর সাইকেল চুরি হচ্ছে। ঈশ্বরগঞ্জে আইন শৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি হয়েছে বলেও তিনি জানান। কেন এমন অবনতি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি থানার ওসিকে দায়ী করেন।

এব্যাপারে ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, জুয়া ও মাদকের বিষয়ে আমাদের অভিযান চলছে এবং চুরির বিষয়টি ঈদের পর কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। ইতিমধ্যে ৮/১০জনকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এসব চুরির ঘটনায় বিভিন্ন এলাকায় মিটিং করে জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মাদক, জুয়া ও চুরি রোধকল্পে পুলিশ প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য জনসাধারণের প্রতি উদাত্ত আহবান জানানো হচ্ছে। মামলা জটিলতার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন টাকার বিষয়ে যে অভিযোগ গুলো তা ঠিক না। তবে আমার কোন অফিসার যদি এমন করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *