ঈশ্বরগঞ্জে যুবলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ মঞ্চ ভাঙচুর আগুন

ঈশ্বরগঞ্জে যুবলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ মঞ্চ ভাঙচুর আগুন

ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ঈশ্বরগঞ্জে যুবলীগের দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এতে দুই পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের উপজেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গতকাল রবিবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঈশ্বরগঞ্জ সদর।

পুলিশের উপস্থিতিতে শহরের মূল সড়কে দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা দা, লাঠি ও রামদা নিয়ে মহড়া দেয়। উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রতিপক্ষকে পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ এসে লাঠিপেটা, ফাঁকা গুলি ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মোটরসাইকেলের বহরসহকারে আনন্দ শোভাযাত্রা করে যুবলীগের নতুন আহ্বায়ক কমিটির পক্ষের নেতাকর্মীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ জানুয়ারি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের ৩৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয় সংগঠনের জেলা কমিটি। ওই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মো. আবুল খায়েরকে। তিনি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমনের ছোট ভাই। যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুছ ছালামকে।

দলীয় সূত্রগুলো জানায়, নির্ধারিত সময়ে (বিগত তিন বছরে) সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে ব্যর্থ হওয়ায় আগের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। তবে নতুন কমিটিতে আগের কমিটির ৯ জনকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।

নতুন কমিটির আহ্বায়ক আবুল খায়ের বলেন, ঘোষিত কমিটির নেতাদের নিয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা ও সমাবেশ আয়োজন করার পূর্ব সিদ্ধান্ত ছিল তাঁদের। সে অনুযায়ী ঈশ্বরগঞ্জ শহরের মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ আঙিনায় সমাবেশ মঞ্চ তৈরি করা হয়। নতুন কমিটির নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহরে আনন্দ শোভাযাত্রা শেষ করে সমাবেশ মঞ্চে এসে সবার পরিচিতি, আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা পরিকল্পনা ঘোষণা করার কথা ছিল।

আবুল খায়ের অভিযোগ করে বলেন, তিনি ময়মনসিংহে অবস্থানকালে জানতে পারেন সাবেক কমিটির নেতারা সমাবেশ মঞ্চে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তাঁর পক্ষের নেতাকর্মীদের ধাওয়া করেছে। আগের কমিটির নেতারা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এবং নতুন কমিটিকে ব্যর্থ প্রমাণ করার জন্য এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ বেছে নিয়েছে। তাদের এই পরিকল্পনা সফল হতে দেওয়া হবে না।

অন্যদিকে বিলুপ্ত কমিটি ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুছ ছাত্তারের সমর্থনপুষ্ট।

বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক মো. মতিউর রহমান মতি বলেন, জামায়াত-বিএনপির চিহ্নিত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দিয়ে গত ২২ জানুয়ারি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের কমিটি করা হয়েছে। এ কারণে আওয়ামী পরিবারের সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে গতকাল সমাবেশ মঞ্চে আগুন ধরিয়ে নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে তাড়িয়ে দিয়েছে। তারা ওই কমিটিকে কোনোভাবেই মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে।

নতুন কমিটিতে তাঁদের কতজন আছেন জানতে চাইলে মতি বলেন, এ বিষয়টিও তাঁর জানা নেই। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ১৪৪ ধারা জারি হওয়ার পরও পুলিশের উপস্থিতিতে কী করে শোভাযাত্রা, মিছিল-মিটিং হয়? এতে বোঝা যায় প্রশাসন পক্ষপাতিত্ব করেছে।

বিলুপ্ত কমিটির সদস্য ও ঈশ্বরগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হানিফা বদরুল আলম প্রদীপ অভিযোগ করে বলেন, ধাওয়াধাওয়ি চলার সময় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ হাসান তাঁদের লোকজনের দিকে পিস্তল তাক করে হুমকি দিয়েছেন।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে হাসান বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করি, পিস্তলের রাজনীতি করি না।’

এদিকে মঞ্চে আগুন দেওয়ার খবর পেয়ে নতুন কমিটির পক্ষের নেতারা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। এ সময় তাঁরা মিছিল করে কাঁচামাটিয়া নদীর সেতু পার হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে আয়োজিত বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানস্থলের দিকে অগ্রসর হন।

ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবদুছ ছাত্তারের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। মিছিল দেখে সেখান থেকে ছাত্তারের সমর্থকরা পাল্টাধাওয়া দিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে আহতদের মধ্যে চার-পাঁচজনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।

এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) সীমা রানী সরকারের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মাঠে নামে। এ অবস্থায়ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনতে পেরে উপজেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয় পুলিশ। পরে ওই সংবর্ধনা মঞ্চ থেকেই থানার উপপরিদর্শক সজীব ঘোষ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এলিশ শরমিনের বরাত দিয়ে ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণা দেন।

এর মধ্যে যুবলীগের নতুন কমিটির আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়কসহ অন্য নেতারা একটি খোলা পিকআপে করে মোটরসাইকেলবহর নিয়ে শোভাযাত্রা করেন শহরে। এ সময় আবারও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুই পক্ষের সমর্থকরা রামদা, দা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে একে অন্যকে ধাওয়া করতে উদ্যত হয়। পরে টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়লে উভয় পক্ষই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এর পরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে পুলিশ আরো কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। প্রায় আধাঘণ্টা পর নতুন কমিটির আহ্বায়ক আবুল খায়েরের সমর্থকরা উপজেলা চেয়ারম্যানের সরকারি বাসভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি বদরুল আলম খান বলেন, পুলিশ চার ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পিস্তল উঁচিয়ে প্রতিপক্ষকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসি বলেন, তিনিও বিষয়টি শুনেছেন। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *