খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির কার্ড হয়েছে জানতেন না কৃষক

খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির কার্ড হয়েছে জানতেন না কৃষক

দুই বছর আগে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির কার্ড হয়েছে জানতেন না কৃষক আবুল হাসেম। কিন্তু তার নামের অনুকূলে বরাদ্দের চাল মাস অন্তর উঠে যেত। চার দিকে যখন চালসহ জনপ্রতিনিধি-ডিলার গ্রেপ্তার হচ্ছে- এমন খবরে কার্ড পৌঁছায় কৃষক হাসেমের হাতে। শুধু হাসেম নয় এমন ঘটনা আরো কয়েকজন অসহায় ব্যক্তির বেলায়ও হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে হাসেম প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন। দুই বছর ধরে তার চাল কে নিচ্ছিল তা জানতে চান কৃষক হাসেম। এই ঘটনা ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের।

উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় ২৩ হাজার ৫১২ উপকারভোগীকে কার্ডের মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল দেওয়া হয়। এ তালিকায় অন্তভর্ভুক্ত হলেও গত দুই বছর ধরে চাল পাননি বলে অভিযোগ তোলেছেন উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের কয়েকজন কার্ডধারী। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

জাটিয়া গ্রামের কৃষক আবুল হাসেম মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালে তার কার্ড হলেও তার কার্ডের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে গেলে পাঠানো হয় ডিলারের কাছে। ডিলারের কাছে গেলে বলা হয় তার নামে কার্ড হয়নি। কিন্তু চলতি মাসে তার বাড়িতে কার্ড পৌঁছানো হয়। কার্ড হাতে পেয়ে দেখতে পারেন তার কার্ড দেখিয়ে ১১ বার ত্রিশ কেজি করে চাল উত্তোলন করে নেওয়া হয়েছে। 

জাটিয়া বাজারে চা বিক্রেতা পারভেজ মিয়ার বাড়িতে তার বাবার মাধ্যমে কার্ড পাঠানো হয় চলতি মাসে। দুই বছর ধরে তার নামে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির কার্ড হয়েছে তিনি জানতেনই না। পারজে মিয়া বলেন, ‘ডিলার আবদুল গণি খাঁ তার বাড়িতে কার্ড পাঠিয়েছেন। এর আগে কার্ড দিয়ে আগে ১১ বার কে চাল তুলে নিয়ে গেছে জানেন না। এ মাসে ত্রিশ কেজি চাল তিনি তুলেছেন।’ 

গত ১৯ এপ্রিল জাটিয়া গ্রামের আবদুল গফুর ও ছাইকুল ইসলামও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন তাদের নামে ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড করে দেবার জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য সাবিনা খাতুন জাতীয় পরিচয় পত্র নিলেও তাদের কার্ড দেওয়া হয়নি। গত কিছুদিন পূর্বে ওয়ার্ড মেম্বার আবুল কাশেম তাদের বাড়িতে গিয়ে কার্ড নিতে বলে। পরে তারা কার্ড নিয়ে দেখতে পান তাদের নামের অনুকূলে ১০ বার চাল তোলে নেওয়া হয়েছে।

ইউপি সদস্য মো. আবুল কাশেম বলেন, কার্ড পাওয়ার পর তিনি সঠিক ভাবে বিতরণ করেছেন। কার্ডধারীরা তার এলাকার বাসিন্দা হলেও রাজনৈতিক ভাবে তাদের (উপকার ভোগীদের) নামে কার্ড বরাদ্দ হয়ে থাকতে পারে। এছাড়া ডিলারের কাছে উপকারভোগীদের কার্ড জমা ছিল।

জাটিয়া বাজারের ডিলার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল গণি খাঁ বলেন, তার কাছে কোনো কার্ড থাকার সুযোগ নেই। কার্ড নিয়ে চাল নিতে আসা ব্যক্তিদের তিনি শুধু চাল দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ সত্য নয়। তাকে রাজনৈতিক ভাবে হেয় করার জন্য অভিযোগ তোলা হচ্ছে। 

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এইচএম কামরুজ্জামান বলেন,  অভিযোগ পাওয়ার পর ৭ দিনের মধ্যে কার্ডগুলো কার কাছে ছিল তা বের করতে ইউপি সদস্য আবুল কাশেমকে বলা হয়েছে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, কার্ডধারীর কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্তের জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *