শিক্ষক নিয়োগ

টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ, শনাক্ত হচ্ছেন ‘জালিয়াত’রা

জাল নিবন্ধন ও অন্যান্য কাগজপত্র। নিয়োগ পেয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে। চক্রের মাধ্যমে জাল কাগজপত্র তৈরি করে নিয়োগ পাওয়া ‘জালিয়াত’ শিক্ষকরা শনাক্ত হতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) যাচাই শেষে জাল ও ভুয়া সনদধারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার জন্য চিঠি পাঠাতে শুরু করেছে।

ঈশ্বরগঞ্জের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও থানায় ইতোমধ্যে চিঠি পৌঁছানো হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করতে কর্তৃপক্ষ নানা গড়িমসি করছে।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) থেকে নিবন্ধন সনদপ্রাপ্ত হয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে তিন হাজার ৫২৬ জন কর্মরত রয়েছেন। জেলার এক হাজার ৭৯টি (স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রথম নিবন্ধন থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত নিয়োগ হওয়া শিক্ষকদের তথ্য চেয়ে জেলা শিক্ষা অফিসে পত্র পাঠায় এনটিআরসিএর পরিচালক (শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান)।

তথ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে এনটিআরসিএর দেওয়া নিবন্ধন সনদ ব্যতীত বা জাল সনদের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের তথ্য পাঠানো থেকে বিরত থেকে অসম্পূর্ণ শিক্ষক নিয়োগের তথ্য পাঠানো হয়। বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে এনটিআরসি থেকে চিঠিও দেওয়া হয়।

এনটিআরসিএ শিক্ষকদের তথ্য যাচাই শেষে ইতোমধ্যে সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় ও থানায় চিঠি পাঠাচ্ছে। তথ্য যাচাই শেষে যেসব শিক্ষকের তথ্য সঠিক রয়েছে সেটি উল্লেখ থাকছে, আবার যেসব শিক্ষকের কাগজপত্রে ত্রুটি ও জালিয়াতি পেয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের আঠারবাড়ি এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান মো. মোস্তফা কামাল। তৎকালীন পরিচালনা কমিটি নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন। তার সনদটি জাল, এমন অভিযোগ ওঠায় গত ৬ নভেম্বর পত্রিকায় ‘নিয়োগ বাংলায় নিবন্ধন ব্যবসায় শিক্ষায়’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি তদন্ত শেষে গত ৩ ডিসেম্বর সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা অফিস ও থানায় চিঠি পাঠায় এনটিআরসিএ। চিঠিতে এনটিআরসিএর মন্তব্য কলামে বলা হয়- ‘সনদটি সঠিক নয়। সনদটি জাল ও ভুয়া। প্রকৃত রোল নম্বরধারীর নাম ভিন্ন।’ ওই অবস্থায় জালিয়াতি ও ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় ভুয়া সনদধারীর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে বলা হয়।

তবে শিক্ষক মো. মোস্তফা কামাল বলেন, তার কাছে সব কাগজপত্র রয়েছে। এনটিআরসিএর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাবেন তিনি। তবে আঠারবাড়ি এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, চিঠি পেয়ে কমিটির সভা করা হয়। সভায় নির্দেশনা অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শুধু মো. মোস্তফা কামাল নন, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় আরও চারজন ভুয়া ও জালিয়াত শিক্ষকের তথ্য পাওয়া গেছে। এনটিআরসিএ তদন্ত শেষে ওইসব শিক্ষকের বিরুদ্ধেও মামলা শেষে এনটিআরসিএকে জানাতে বলা হয়েছে। তারা হলেন- উচাখিলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক (বিজ্ঞান) মারফত আলী (২০১০ সালের ষষ্ঠ নিবন্ধন দাখিল করেন, যা ভুয়া), বৈরাটি আলীম মাদ্রাসার প্রভাষক (আরবি) নুর উদ্দিন (২০০৫ সালের নিবন্ধন দাখিল করেন, তাতে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করা হয়), পিতাম্বরপাড়া হোসাইনিয়া বহুমুখী মাদ্রাসার ট্রেড ইন্সট্রাক্টর মো. আলম খান ও মো. বোরহান উদ্দিন। তারা দু’জনেই ২০১০ সালের নিবন্ধন দাখিল করেন। তারা প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ পান ২০১১ সালে। তবে পিতাম্বরপাড়া হোসাইনিয়া বহুমুখী মাদ্রাসার মাওলানা মো. শোয়েব বলেন, চিঠি পেয়ে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকদের তথ্য নিয়েছে এনটিআরসিএ। তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে যাদের সনদ ভুয়া বা ত্রুটিপূর্ণ পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বিষয়ে মামলার জন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য না পেলেও অন্যান্য মাধ্যমে খবর পেয়ে মাঠ পর্যায়ে সন্দেহভাজন শিক্ষকদের তালিকাও তারা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য এনটিআরসিএর কাছে পাঠাচ্ছেন। এ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতরা শনাক্ত হতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার জন্য নির্দেশনা এলেও প্রতিষ্ঠান মামলার দিকে যাচ্ছে না। সূত্র সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *