পাটের আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা

পাটের আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের নান্দাইলের পাট চাষী কৃষকরা পাটের আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে সময়মতো পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাট কেটে তা বিভিন্ন জলাশয়ে জাগ দেওয়া নিয়ে কিছুটা হতাশায় পরলেও পরে নদী, নালা, খাল, বিল ও ডোবায় জাগ দিয়েছেন কৃষকরা।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, পাট চাষি কৃষকেরা পাট কেটে তা নদী, নালা, খাল, বিল ও ডোবায় জাগ দিয়ে রেখেছেন। কোন কোন জায়গায় দেখা গেছে নারী-পুরুষ মিলে পাট থেকে আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছেন। আবার কেউ কেউ ছাড়ানো আঁশ পানিতে পরিষ্কার করে বাঁশের আড় টানিয়ে রোদে শুকাচ্ছেন পাট। আঁশ থেকে বের হওয়া পাটশোলা ছোট ছোট আঁটি বেঁধে সারিসারি দাঁড় করিয়ে রেখেছেন শুকাতে। কেউ কেউ শুকনো পাট বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন বিক্রি করতে। সব মিলিয়ে পাট চাষী কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পাট উৎপাদন হয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান। তিনি জানান, এ উপজেলায় ১৫৫০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। এবার ফলনও ভালো হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে দেশি পাট ৮টন, তোষা ৯ টন, কেনাফ ৮.৫ টন ও মেস্তা ৮.৫ টন করে ফলন হয়েছে। পাটের দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকেরা। তুলনামূলক বৃষ্টিপাত কম থাকায় কিছু জমিতে ফসল কিছুটা কম হলেও বেশিরভাগ জমিতে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলন এবং বাজারে ভালো দর পাওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।

বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে ভালো মানের পাটের মূল্য তিন হাজার টাকা মণ পর্যন্ত। নান্দাইল বাজারের পাট ব্যবসায়ী জিতু চৌহান ও জিয়া জানান, মান অনুযায়ী পাটের মূল্য দেশি (সোতা) ২২’শ থেকে ২৪‘শ টাকা, কেনাফ, মেস্তা, তুষা ২৫’শ থেকে ২৮’শ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। ফলে ন্যায্যমূল্য পেয়ে পাট চাষিদের মাঝে এখন পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

নান্দাইল উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের হালিউড়া গ্রামের কৃষক আলহাজ্ব রুকন উদ্দিন ভূইয়া জানান, তিন কাটা (৩০ শতক) জমিতে পাট চাষ করেছিলাম পাটও ভালো হয়েছে এবং অন্য বছরের তুলনায় দাম বেশি হওয়ায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে না। এছাড়াও ওই গ্রামের আবুল হোসেন চার কাটা, ফিরোজ মিয়া দুই কাটা, আব্দুল কাদির আড়াই কাটা ও ফজলুল হক দেড় কাটাসহ ওই এলাকার কম-বেশি অনেকেই পাট চাষ করেছেন।

হালউড়া গ্রামের কৃষক ফজলুল হক জানান, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি কম হওয়ায় পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম তবে পড়ে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ফলনও ভালো হয়েছে।

পাট চাষী কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাট চাষ একটি লাভজনক ফসল। শুরুতেই একটু ঘন ভাবে বীজ বপন করলে তিন ধাপে অর্থ অর্জন করা যায়। বাজারে পাটশাকের ব্যাপক চাহিদা। তেমনি জ্বালানি হিসেবে পাট শোলারও চাহিদা রয়েছে। বর্তমান বাজারে ৬০০ টাকা দর মন প্রতি পাটশোলা। প্রতি কাটা জমিতে ৩-৪ মন পাটশোলা পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে পাট চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এছাড়াও এবছর পাটের ন্যায্যমূল্য পেয়ে চাষিদের মাঝে পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *