মুখোশধারীকে চিনে ফেলায় হেলালকে প্রাণ দিতে হয়

মুখোশধারীকে চিনে ফেলায় হেলালকে প্রাণ দিতে হয়

ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ বাজারে ব্যবসার কাজ শেষে প্রতিদিন মূলধনের টাকা নিয়েই বাড়ি ফেরেন হেলাল উদ্দিন। ওই সময় তার কাছে ১৫-২০ হাজার টাকার মতো থাকে-এমনটি জানতো সবাই। স্থানীয় কিশোর ও তরুণদের একটি দল পরিকল্পনা করে হেলালের সেই টাকা ছিনিয়ে নেবার।

বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে হেলালের গতিরোধ করে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় মুখোশধারীদের একজনকে চিনে ফেলেন হেলাল। সেটাই কাল হয় হেলালের। হত্যার পরিকল্পনা না থাকলেও চিনে ফেলায় হেলালকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ একটি পরিত্যক্ত টয়লেটের ট্যাংকিতে ফেলে রাখা হয়।

হত্যাকাণ্ডের ২১ দিনের মাথায় শুক্রবার গভীর রাতে পুলিশ হেলালের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে ৯ জন। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে।

উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের রাধাবল্লবপুর গ্রামের মো. হাসিম উদ্দিনের দুই ছেলের মধ্যে ছোট হেলাল উদ্দিন (৩৫)। তিনি বিভিন্ন বাজারে চুন, তামাক পাতা ও জর্দার ব্যবসা করতেন। গত ১৮ জানুয়ারি উচাখিলা বাজারে ব্যবসার কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন তিনি।

এ বিষয়ে ২০ জানুয়ারি ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্ত্রী মাজেদা খাতুন। কিন্তু ২১ জানুয়ারি রাতে মুঠোফোনের একটি নম্বর থেকে ২ লাখ টাকা মুক্তিপন চেয়ে ফোন করা হয় হেলালের পরিবারের কাছে। এরপর প্রযুক্তির সহায়তায় র‌্যাবের একটি দল ৪ ফেব্রুয়ারি উচাখিলার ঈশ্বরপুর গ্রামের আক্কাছ ওরফে আকাশ (১৮) ও মঘা গ্রামের ইজিবাইক চালক কাঞ্চন মিয়াকে (১৮) আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।

বিষয়টি নিয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি হেলালের স্ত্রী বাদি হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ আকাশ ও কাঞ্চনকে আদালতে সোপর্দ করে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে ৬ ফেব্রুয়ারি রাধাবল্লবপুর গ্রামের রিপন আচার্য্য (২৮), মঘা গ্রামের মো. ফারুখ মিয়া (১৯) ও উচাখিলা বক্ষিলবাড়ি এলাকার খায়রুল ইসলামকে (১৪) আটক করা হয়। তাদেরকে আদালতে পাঠানো হলে খায়রুলকে কিশোর সংশোধনাগারে এবং রিপন ও ফারুখকে ২ দিনের রিমান্ডে আনা হয়।

পুলিশ জানায়, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে রিপন ও ফারুখ ঘটনার মূল হোতা হিসেবে রাধাবল্লবপুর গ্রামের প্রাণেশ আচার্য্যর ছেলে উত্তম আচার্য্যর নাম জানায়। সিলেটে আত্মগোপনে থাকা উত্তম আচার্য্যকে শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশ তাদের হেফাজতে নেয়। উত্তমকে জিজ্ঞাসাবাদে হেলালের বিষয়ে তথ্য দেয় পুলিশকে। হত্যাকাণ্ডে ১৫ জন জড়িত থাকার কথা জানায় উত্তম।

হেলাল উদ্দিনের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাকে ছেড়ে দিতে চাইলেও অভিযানে অংশ নেওয়া রিপন আচার্য্যকে চিনে ফেলায় হাত-পা বেঁধে গলায় মাফলার প্যাঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। হেলালের বাড়ি থেকে মাত্র একশ গজ দূরেই শাহেদের জমিতে চালানো হয় হত্যাকাণ্ড।

পরে পাশেই কামরুল ইসলামের বাড়িতে একটি অব্যহৃত টয়লেটের ট্যাংকিতে লাশ ফেলে রাখা হয়। এরপর হেলালের কাছ থেকে পাওয়া ২০ হাজার টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয় ছিনতাইকারীরা।

পুলিশ হেফাজতে থাকা উত্তম আচার্য্য জানান, প্রতিবেশী ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিনের কাছে টাকা থাকে এটা তাদের জানা ছিল। তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিতেই সবাই মুখ বেঁধে ও মাস্ক পড়ে পথরোধ করে। টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় উত্তমের মুখ খুলে যাওয়ায় তাকে চিনে ফেলেন হেলাল। পরে তারা হেলালকে হাত-পা বেঁধে হত্যা করেন। তারা হেলালের ব্যাগে  ২০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। তিনি নিজে ২ হাজার টাকা ভাগে পেয়েছিলেন।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. মোখলেছুর রহমান আকন্দ বলেন, অপহরণের ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের সূত্রে ধরে ও দেখানো জায়গা থেকে হেলালের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লাশ ময়মনাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হচ্ছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *