হিজড়ার অত্যাচারে অতিষ্ঠ ঈশ্বরগঞ্জের সাধারণ মানুষ

হিজড়ার অত্যাচারে অতিষ্ঠ ঈশ্বরগঞ্জের সাধারণ মানুষ

ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ঈশ্বরগঞ্জে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়ার) অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। সরেজমিনে দেখা যায়, পৌর শহরের মুক্তিযোদ্ধা মোড় সহ বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় হিজড়ারা টাকা আদায় করছে।

বিয়ে-সাদি, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান কিংবা নবজাতকের জন্ম হলেই তারা এসে হাজির! যার কাছ থেকে যেমন আদায় করা যায়। দোকানপাট , বরযাত্রী ও বাস-ট্রাক থেকেও চাঁদা তুলছে তারা। টাকা না দিলে অশ্লীল গালিগালাজ ও অশালীন অঙ্গভঙ্গি করছে।

ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম খান বলেন, এদের কর্মসংস্থান কিংবা সরকারি কর্মসূচির আওতায় নিয়ে এলে দীর্ঘমেয়াদী সুফল পাওয়া যেতে পারে।

আল হেরা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক, এহসান উল্লাহ মিজান বলেন, এরা অশ্রাব্য কথাবার্তা বলে। পথচারী ও মানুষকে গালিগালাজ করে হেনস্থা করে যার প্রভাব পড়তে পারে কোমলমতি শিশুদের উপর। সরকার ও প্রশাসনের উচিত এদের দিকে নজরদারি করা।

হিজড়া চাঁদনী(২৪) বলেন, আমাদের বাবা মা সবাই আছে। কেউই আমাদের ভালোভাবে গ্রহণ করে না। সমাজের মূল স্রোতে আসতে চাই। ছাঁড়তে চাই এ- অভিশপ্ত জীবন। সরকার যদি আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তবে এসব (চাঁদা তোলা) ছেড়ে দিবো।

হিজড়া গুরুমা হাসি (৩৫) বলেন, এই জীবন আর ভালো লাগেনা। সবাই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। হিজড়া, গুরমা বলে ক্ষ্যাপায়। না পারি পরিবারের সাথে থাকতে না পারি সমাজে মিশতে!

জানা যায় হাসির জন্মস্থান কিশোরগঞ্জের তাড়াইল সদরে বর্তমানে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ীতে থাকেন হিজড়া গুরু লাভলীর আশ্রয়ে একটি তৃতীয় লিঙ্গের দলে। এখানে পরিবার থেকে বিতাড়িত বিভিন্ন এলাকার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা আশ্রয় পেয়েছে।

নান্দাইল উপজেলার বাসিন্দা হৃদয় ওরফে রিয়া মণি (২৬) জানান, তিনি অনার্স করছেন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে বাংলা বিভাগের শেষ বর্ষে। সরকারি চাকরিও হয়েছিলো তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মেডিকেলে আনফিট হন ( তৃতীয় লিঙ্গ ধরা পড়ে) তারপর হতাশাগ্রস্ত হয়ে ঘর ছেড়েছেন আর ফেরা হয়নি বাড়িতে। শেষে ঠাঁই হয়েছে গুরুমা লাভলীর দলে। হাসি, রাণী, সরূপা, চাঁদনী সবার আশ্রয় লাভলীর দল।

ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার সাবেক ওয়ার্ড-কাউন্সিলর একেএম মিন্টু বলেন, আগে দেখতাম তৃতীয় লিঙ্গের লোকজন ময়মনসিংহ শহরে চাঁদা তুলতো আজকাল এসব গ্রামে গঞ্জে হচ্ছে। মানুষ অতিষ্ঠ এদের অত্যাচারে।

ইউএনও মোসাঃ হাফিজা জেসমিন বলেন,তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর লোকজন যদি চায় তবে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী জীবন- মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো। যেনো দক্ষ হয়ে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে স্বাবলম্বী হতে পারে। তারা চাইলে আশ্রয়ণ প্রকল্পেও থাকার ব্যবস্থা করা যাবে। তবে এদের বেশিরভাগই ভাসমান ও অনাগ্রহী তাই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাটা কঠিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *