ঈশ্বরগঞ্জে কবিরাজের অপচিকিৎসায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ঈশ্বরগঞ্জে কবিরাজের অপচিকিৎসায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধি: ঈশ্বরগঞ্জে কবিরাজের অপচিকিৎসায় লিমা আক্তার তামান্না (১৪) নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। (৩০ আগস্ট) মঙ্গলবার দুপুরে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের ভাসাটি গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। নিহত শিক্ষার্থী ওই গ্রামের আব্দুর রাশিদের মেয়ে।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিহত তামান্না জাটিয়া গাফুরিয়া দাখিল মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। সে দীর্ঘদিন যাবৎ কোমর ব্যথায় ভোগছিল। এ অবস্থায় পরিবারের লোকজন ডাক্তারি চিকিৎসা করায়। এক পর্যায়ে ডাক্তারি চিকিৎসায় উন্নতি না হওয়ায় আমেনা খাতুন (৫৫) নামে এক মহিলা কবিরাজের চিকিৎসার আশ্রয় নেন।

ওই মহিলা কবিরাজের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার সুসং দুর্গাপুর এলাকার তাওশালপাড়া গ্রামে। সে ওই এলাকার মৃত মনু মিয়ার স্ত্রী। তবে তার মেয়ের স্বামীর বাড়ি জাটিয়া ইউনিয়নের ভাসাটি গ্রামে হওয়ায় এখানে আসা যাওয়া এবং ওই এলাকার অনেকের চিকিৎসা করতেন। এ অবস্থায় গত শুক্রবার থেকে তামান্নার চিকিৎসা শুরু করেন তিনি।

পরে কবিরাজি চিকিৎসায় তামান্নার অবস্থার অবনতি হলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এরপর ময়মনসিংহে নেওয়ার পথেই ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে স্থানীয় প্রতিবেশী ও জাটিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান আকন্দ হলুদ বলেন, কবিরাজের অপচিকিৎসায় মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, সারা রাত ব্যাপী কাপড়ের সল্তায় চুন, গন্ধক মিশিয়ে ও আগরবাতির ধোঁয়া মেয়েটির নাকে দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়েছে।

এ বিষয়ে কবিরাজ আমেনা খাতুনের মেয়ে আকলিমা খাতুন আখি বলেন, আমার মা শুধু ঝাঁড় ফুঁক ও তাবিজ দিয়ে চিকিৎসা করেছে। এতে ভালো না হওয়ায় মেয়েটিকে ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে বলা হয়। কিন্তু মেয়েটির বাবা মেয়েটিকে ডাক্তারের কাছে না নিয়ে নিজে শাসকষ্টের কবিরাজি ওষুধ বানিয়ে খাওয়ায়। এ কারণেই হয়তো মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে।

জানতে চাইলে নিহতের পিতা আব্দুর রশিদ প্রথমে বলেন, ডাক্তারি চিকিৎসায় উন্নতি না হওয়ায় আমার স্ত্রী তাসলিমার কথায় কবিরাজি চিকিৎসার আশ্রয় নিই। মহিলা কবিরাজের অপচিকিৎসার কারণেই আমার মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে। আমি ভুল করছি ওই কবিরাজের কাছে চিকিৎসা করিয়ে। পরে থানায় অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চাইলে তিনি বলেন, আমার মেয়ের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। আমার কোন অভিযোগ নাই।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নূরুল হুদা খাঁন বলেন, বর্তমান অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগেও কবিরাজি চিকিৎসার কথা শুনতে হবে এটা চিন্তা করাও কঠিন। এসব কুসংস্কার ও অপচিকিৎসা রুখতে গ্রাম গঞ্জের আবাল বৃদ্ধ বণিতাদের সচেতন হওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ পীরজাদা শেখ মোহাম্মদ মোস্তাছিনুর রহমান বলেন, এবিষয়ে কাহারো পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আপনাদের কাছ থেকে জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *