আওয়ামী লীগ লোগু

ত্রিশাল-ঈশ্বরগঞ্জ আ’লীগের প্রার্থীতার দৌঁড়ে বিদ্রোহী-বিতর্কিতরা

ত্রিশাল-ঈশ্বরগঞ্জ আ’লীগের প্রার্থীতার দৌঁড়ে বিদ্রোহী-বিতর্কিতরা। দীর্ঘ ১৯ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। আগামী ২১ ও ২২ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে ত্রিশাল ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন।

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পর্যায়ে দলের শীর্ষ পদ পেতে দৌঁড় ঝাপ শুরু করেছেন পদপ্রত্যাশী বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এই প্রতিযোগিতায় থেমে নেই বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িতরাও। স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতাকারী ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার পারিবারের আত্মীয়ও পদ পেতে দৌঁড়-ঝাপ শুরু করেছেন।

তবে অভিযুক্তরা তাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করছেন। তাদের মন্তব্য, প্রার্থীরা একে অপরের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। ময়মনসিংহ বিভাগে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল জানিয়েছেন, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী কেউ পদ-পদবী পাবে না।

ত্রিশাল ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতাকারীরা এখন আওয়ামী লীগেরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ পেতে কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

জানা গেছে, ত্রিশাল সম্মেলনকে ঘিরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ পাওয়ার দৌড়ে আছেন সাংসদ হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী, জেলা আওয়াম লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নবী নেওয়াজ সরকার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম মো. শামছুদ্দিন ও পৌরসভার মেয়র আনিছুজ্জামান আনিছ প্রমুখ।

অভিযোগ রয়েছে নবী নেওয়াজ সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থীর বিপক্ষে প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র আনারস মার্কার প্রার্থীর হয়ে নির্বাচন পরিচালনা করেন এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করেন।

এ অভিযোগের বিষয়ে নবী নেওয়াজ সরকার বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। আমি এ দলের জন্য সবকিছু করতে পারি। আর স্বতন্ত্র আনারস মার্কার প্রার্থীও যিনি ছিলেন তিনিও আওয়ামী লীগের লোক।

আনারস প্রার্থীর নির্বাচনে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন স্বীকার করে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময়কালে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা নিয়ে আওয়ামী লীগ এতোটা হার্ডলাইনে ছিলো না। তবে এখন যে কঠিন নির্দেশনা দেয়া আছে যদি এমন নির্দেশনা থাকতো তবে আমি ওই প্রার্থীর প্রচারণায় যেতাম না।

অপরদিকে, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম মো. শামছুদ্দিন পরিবহন শ্রমিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সেখানকার নানা অভিযোগ ও সাংগঠনিক অদক্ষতার কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগ তার ওপর অনাস্থা জ্ঞাপন করে এবং জেলা আওয়ামী লীগকে চিঠি দিয়ে অবহিত করে। পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের সভায় তা গৃহীত হলে তিনি এই পদ থেকে পদত্যাগ করেন। মন্তব্য জানতে তার মোবাইলে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

এছাড়া ত্রিশালে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ইকবাল হোসেন, জিয়াউল হক সবুজ, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জুয়েল সরকার, এ কে এম মাহাবুল আলম পারভেজ, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম মন্ডল প্রার্থীতার এ দৌঁড়ে আছেন।

অভিযোগ রয়েছে, জিয়াউল হক সবুজের শ্বশুর পলাতক যুদ্ধাপরাধী ত্রিশালের কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার আদিল সরকার। তিনি তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধী এবং পলাতক। এছাড়া স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরোধিতা করা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে নির্বাচন করার অভিযোগ রয়েছে সবুজের বিরুদ্ধে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জিয়াউল হক সবুজ বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে আমার রাজনীতির হাতেখড়ি। এরপর যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের পদ পেয়ে দায়িত্ব পালন করেছি।

তার শ্বশুরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যখন বিয়ে করি তখন এ বিষটি আমি জানতাম না। যখন জানতে পেরেছি এরপর থেকে আমার শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে আমি কোনো সম্পর্ক রাখিনি। এছাড়া আমার বাবা একজন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। যদি জানতাম তাহলে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে এ সম্পর্কে যেতাম না। আমি ছাত্র থেকে রাজনীতি করি। আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত কর্মী।

স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরোধিতা করার বিষয়ে তিনি বলেন, যিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনিও আমাদের দলেরই কর্মী। প্রথম অবস্থায় আমি ওনার কয়েকটি মিটিংয়ে গিয়েছি। এরপর আর যাইনি।

এদিকে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের দৌড়ে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক আব্দুস ছাত্তার, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বুলবুল (ভুলু হাজী), ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমন, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক দুলাল ভূঞা, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. তারিকুল হাসান তারেক, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এ.কে.এম. হারুন-অর-রশীদ এবং ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাফির উদ্দিন আহমেদ।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস ছাত্তারের ভাতিজা উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমনের সঙ্গে দলীয় রাজনীতিতে কোন্দল আছে। তাদের এই দ্বন্দ্বের কারণে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি হয়। যদিও ওনারা এ বিষটি অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, তাদের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান সুমন গত পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতার কারণে কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার হন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার এবং আমার চাচার মধ্যে কোনো প্রকার দলীয় কোন্দল নেই। এসব গুজব। নৌকার বিরোধিতার কারণে কেন্দ্র থেকে বহিষ্কারের প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি নৌকার বিরোধিতা করিনি। কেন্দ্র থেকে কেনো আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে সেটা আমি এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। যেদিন বহিষ্কারের ঘোষণা আসে সেদিন আমি এলাকায় ছিলাম না।

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস ছাত্তারকে তার মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এছাড়া ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বুলবুল (ভুলু হাজী) বিগত উপজেলা নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতা করেন। একই রকমভাবে আবু বকর সিদ্দিক দুলাল ভূঞা পৌরসভা নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের বিরোধিতা করেন।

অভিযোগের বিষয়ে মো. রফিকুল ইসলাম বুলবুল (ভুলু হাজী) বলেন, এ অভিযোগ মিথ্যা। আমি নৌকার বিরোধী কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করিনি। আমি বহু বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আওয়ামী লীগ ভালো থাকুক আমি এটাই চাই। আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।

আবু বকর সিদ্দিক দুলাল ভূঞা বলেন, আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা। বিরোধীরা এসব গুজব ছড়াচ্ছে।

ওই এলাকার আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, আমরা আমাদের মত করে কে কি করেছে সব খবরই নিয়েছি। বিগত বেশ কয়েক বছর যাবৎ তাদের আমরা নার্সিং করেছি। এছাড়া আমাদের টিমের লোকজন আছে, জেলা আওয়ামী লীগ আছে, উপজেলা আওয়ামী লীগ আছে সবার থেকেই খোঁজখবর নিয়েছি। প্রার্থীতার দৌঁড়ে যারা আছেন সবারই অতীত-বর্তমানের বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আমরা সঠিক লোকে হাতেই দায়িত্ব দিবো।

বিদ্রোহী এবং বিতর্কিতরা কি কমিটিতে আসতে পারবে? প্রশ্নে তিনি বলেন, দলের শৃঙ্খলা যারাই মানেন নি তারা কোনোভাবেই কমিটিতে আসতে পারবে না। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাও স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন।

বিভিন্ন সময়ে দলের বিরুদ্ধে নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িতরা প্রধান দুই পদে প্রার্থী হওয়ায় অস্বস্তিতে আছেন দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা চান দু:সময়ে যারা দলের নেতাকর্মীদের পাশে ছিলো, দলের হাল ধরেছিলো এবং সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্যতা রাখেন তারাই যেন দলের কাণ্ডারি হয়ে আসেন।

উল্লেখ্য, ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৩ সাল। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ১১ অক্টোবর ২০০৩ সাল। দীর্ঘ ১৯ বছর পর সম্মেলন হতে যাচ্ছে এ দুই ইউনিটের।

সূত্রঃ বাংলাদেশ জার্নাল
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২২, ০২:৩৭

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *