লাশ

গৃহকর্মীর কাজ করতে গিয়ে ফিরল লাশ হয়ে

ঈশ্বরগঞ্জের এক তরুণী ঢাকায় গৃহকর্মীর কাজ করতে গিয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। লাশ নিয়ে গৃহকর্ত্রী বাড়ি গেলে স্থানীয় লোকজন তাকে আটকে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় গৃহকর্ত্রীকে।

নিহত গৃহকর্মীর নাম তানিয়া আক্তার (১৭)। সে ঈশ্বরগঞ্জের সরিষা ইউনিয়নের মারুয়াখালী গ্রামের মো. তোতা মিয়ার মেয়ে।

পুলিশ ও নিহতের পরিবার জানায়, তানিয়ার বাবা পেশায় দিনমজুর। কিন্তু শারীরিক অসুস্থ্যতার কারণে কয়েকমাস ধরে কাজে যেতে পারেন না। ওই অবস্থায় বড় সংসারের বোঝা সামলানো কষ্টকর হয়ে পড়ে পরিবারটির। পরে পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে তানিয়া আক্তার ঢাকার বনানী এলাকায় এক বাসায় গৃহকর্মীর কাজে যায়।

গত সাড়ে তিন মাস পূর্বে প্রতিমাসে ৬ হাজার টাকা বেতনে কাজে যোগ দেয় সে। কাজে যোগ দেওয়ার পর গত আড়াই মাস পূর্বে বাবার বিকাশ নম্বরে মাত্র ৫ হাজার টাকা পাঠায় তানিয়ার গৃহকর্ত্রী। কিন্তু আর টাকাও পাচ্ছিলেন না পরিবারটি। এর মধ্যে গত শুক্রবার দুপুরে তানিয়ার বাবার মুঠোফোনে গৃহকর্ত্রী বদরুন নাহার ফোন করেন। মেয়ের অসুস্থ্যতার কথা জানিয়ে দ্রুত বনানী যেতে বলা হয় তাদের।

মেয়ের অসুস্থ্যতার কথা শুনে পরিবারের লোকজন রওনা দেন মেয়ের কাছে যেতে। কিন্তু গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় যেতেই বিকেলে ফের ফোন আসে তানিয়ার বাবার ফোনে। তাদের বলা হয়- তানিয়াকে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ওই সময় তানিয়ার বাবা তাদের অবস্থানের কথা জানালে সেখানেই অপেক্ষা করতে বলা হয়।

দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে এসে থামে পরিবারটির কাছে। ভেতরে দেখেন তানিয়ার নিথর দেহ। সঙ্গে ছিলো গৃহকর্ত্রী বদরুন নাহারও। সেখান থেকে গৃহকর্ত্রী চলে যেতে চাইলে কৌশলে নিয়ে যাওয়া হয় তানিয়ার বাড়িতে। পরে সেখানে এলাকার লোকজন গৃহকর্ত্রী বদরুন নাহারকে একটি ঘরে আটকে খবর দেয় আঠারবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে।

পুলিশ বিষয়টি পর্যালোচনা করে শনিবার বেলা ২টার দিকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। তানিয়াকে বহনকরা অ্যাম্বুলেন্স ও চালককে পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তানিয়ার গৃহকর্ত্রী বদরুন নাহারকেও পুলিশ হেফাজতে নেয়।

তানিয়ার লাশের সুরতহাল করেছেন আঠারবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মো. জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, নিহতের বাম কান ফোলা। নাক ও কান দিয়ে রক্ত বের হওয়ার আলামত পাওয়া গেছে। এছাড়া শরীরে কোনো আঘাতের চি‎হ্ন তারা পাননি।

তানিয়ার বাবা মো. তোতা মিয়া বলেন, মেয়েকে কাজ করতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে। মেয়ে হত্যার বিচার চান তিনি।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. আবদুল কাদের মিয়া বলেন, গৃহকর্ত্রী তাদের কাছে দাবি করছে, তিন-চারদিন ডায়রিয়া হওয়ায় মৃত্যু হয়েছে মেয়েটির। কিন্তু নিহতের শরীরে তারা কিছু আলামত পেয়েছেন। ওই অবস্থায় মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রোববার মর্গে পাঠানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *