বাবা হারানোর দুই মাস পর ফুটফুটে শিশুর জন্ম

বাবা হারানোর দুই মাস পর ফুটফুটে শিশুর জন্ম

ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ বাবা হারানোর দুই মাস পর ফুটফুটে শিশুর জন্ম। মাত্র ৩ দিন বয়সী ফুটফুটে সুন্দর শিশু আল আয়াত আমিন। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ক্যামেরার দিকে। জন্মের পরপরই তার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে শিশুটির জন্য দোয়া ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন মানুষ। নবজাতক শিশু জন্ম নিলে আনন্দে স্বজনরা তার ছবি পোস্ট করে স্ট্যাটাস দেওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু শিশু আল আয়াত আমিনের ক্ষেত্রে তা একটু ব্যতিক্রম। তাকে নিয়ে স্বজনদের চেয়ে বেশি আবেগাপ্লুত পুরো উপজেলাবাসী। তার পিছনে রয়েছে এক করুণ কাহিনী।

শিশুটি জন্মের দুই মাস আগে তার বাবা প্রয়াত আল-আমিনেরের জন্য কেঁদেছিল পুরো উপজেলাবাসী। দিনটি ছিল ৫ জুলাই। ‘জীবন ও সময়ের মূল্য’ নিয়ে প্রেরণামূলক একটি স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করার প্রায় সাত ঘণ্টার মাথায় ট্রেনের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় শিশু আয়াতের বাবার। মায়ের গর্ভে তখন আট মাস বয়সের ছিল শিশু কন্যা আয়াত।

বাবার মৃত্যুর দুই মাসের মাথায় মায়ের গর্ভে থাকা সেই শিশুটি গত (৩ সেপ্টেম্বর) রবিবার হাসপাতালের করিডোরে মায়ের বুক আলোকিত করে পৃথিবীতে আসে ।

প্রয়াত স্বামীর রেখে যাওয়া স্মৃতি ধরে রাখতে তার নামের সঙ্গে মিলিয়ে মেয়েটির নাম রাখেন আল আয়াত আমিন। মা স্বর্ণা হয়তো মেয়েকে আঁকড়ে ধরে কোনোমতে বাকিটা জীবন কাটাতে ও স্বামী হারানোর দুঃখ গুছাতে চাইবেন। কিন্তু জন্মের আগেই পিতাকে হারানো শিশু আয়াত কি দিয়ে তার দুঃখ গুছাবে? কাকে ডাকবে বাবা বলে! এ দুঃখ যেন তার জন্ম সহোদর।

এর আগে গত ৫ জুলাই রাতে আল-আমিন রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় নরসিংদীর হাঁড়িখোলা রেলক্রসিংয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে।

আল আমিন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক ও কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ী মো. আবদুর রশিদের ছেলে। তিনি রাজধানীর রামপুরা এলাকায় একটি রেস্তোরাঁয় ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি নিজ গ্রাম ও আশপাশের এলাকায় নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। তার দুই মাস পর তার মেয়ে জন্ম নিলে ফের আপ্লুত উপজেলাবাসী।

এদিকে প্রয়াত আল-আমিনের স্ত্রী ও নবজাতক আয়াতের মা স্বর্ণা জানান, আমার স্বামীর মৃত্যুর জন্য ও আমার মেয়ে এতিম হওয়ার পিছনে রেল কর্তৃপক্ষ দায়ী। ট্রেন চলাচলের সময় যানবাহন আটকানোর জন্য কোনো পাহারাদার কিংবা প্রতিবন্ধক কিছুই নেই।

পাহারাদার না থাকা কিংবা যানবাহন আটকানোর কিছু না থাকায় আমার স্বামীর ট্রেনের সাথে সংঘর্ষে নিহত হয়েছিলেন। আমার মতো আর কেউ যাতে অকালে বিধবা না হয়। কোনো সন্তান যাতে এতিম না হয় সেজন্য সরকারের কাছে রেল ব্যবস্থাপনায় বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।

কান্না জড়িত তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে কোনো দিন বাবার আদর পাবে না, বাবাকে দেখতেও পাবে না। এই হলো আমাদের কপাল। স্বামীর রেখে যাওয়া স্মৃতি মেয়ে আয়াতকে নিয়ে বাকিটা জীবন কাটাতে চাই। পাশাপাশি সকলের কাছে তিনি নিজের ও সন্তানের জন্য দোয়া চেয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *