সবজির অস্বাভাবিক দর পতন আর্থিক ক্ষতির মুখে চাষিরা

সবজির অস্বাভাবিক দর পতন আর্থিক ক্ষতির মুখে চাষিরা

ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ রমজানের শুরুর দিকে ঈশ্বরগঞ্জে সবজির বাজার দর ছিল চাঙ্গা। ভালো দর পেয়ে চাষিরা লাভবান হয়েছিলেন। কিন্তু পনের রমজনের পর থেকে সব ধরনের সবজির দর কমেছে। তবে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে শসা, বেগুন ও চিচিঙ্গার।

বর্তমানে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ৮০ টাকা কেজি দরের বেগুন এখন বিক্রি হচ্ছে পাঁচ টাকায়। শসা ৭০ টাকার স্থলে এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০ টাকায়। ক্ষেত্র বিশেষ ৫ টাকা কেজি ধরেও শসা বিক্রি হচ্ছে। ৬০ টাকা কেজি দরের চিচিঙ্গা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। ৮০ টাকার পাতি লাউ এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। হঠাৎ বাজারের দর পতনে ক্রেতারা খুশি হলেও চাষীদের এখন মূলধন হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে রবি মৌসুমে উপজেলার সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১হাজার ২শত ৬৫ হেক্টর। সেক্ষেত্রে অর্জিত হয়েছে ১হাজার ২শত ৭০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও সবজির মূল্য হ্রাস চাষীদের আবাদ অর্জন আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে। চাষিরা এখন আর্থিক ও মানসিক কষ্টে ভুগছেন।

ঈশ্বরগঞ্জ ইউনিয়নের দড়ি পাচাশী গ্রামের চাষী আরশাদ মিয়া (৩৫) জানান, তিনি রবি মৌসুমে ৫০ শতক জমিতে ললিতা ও পার্পল কিং জাতের বেগুন চাষ করেছেন। ফলন হয়েছে প্রচুর। তার ৫০ শতক জমি চাষ করতে ব্যয় হয়েছে ১লক্ষ টাকা। রমজানের এক সাপ্তাহ পূর্ব থেকে ১০ রমজান পর্যন্ত বাজার দর ভাল থাকায় ২০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। এরপর হঠাৎ বাজার দর পড়ে যাওয়ায় পাইকাররা বেগুন কিনতে মাঠে যাচ্ছে না। খেতে থোকা থোকা পরিপক্ক বেগুন ঝুলছে। ক্রেতার অভাবে খেতের বেগুন খেতেই নষ্ট হওয়ায় পথে। তিনি আরো জানান, পাইকাররা আগে আমাদের কাছে ফোন করে খোঁজ খবর নিত। এখন ৫জন পাইকারকে ফোন দিলে ২/১জন আসে। পরিপক্ক বেগুন গুলো নষ্ট না করে ৫টাকা কেজি দরে তাঁদের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে।

অপরদিকে উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের কুমুরিয়ার চর গ্রামের চাষী ফেরদৌস মিয়া জানান, তিনি ১৪০ শতাংশ জমিতে তামিম প্লাস জাতের শসা চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। ১লক্ষ টাকার শসা বিক্রি করার পর বাজার দর অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। স্বল্প আয়ুর আবাদ বিধায় গাছগুলো মরে যাচ্ছে। এবার লাভের পরিবর্তে তার ৬০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

এছাড়াও মাইজবাগ ইউনিয়নের ছোট উত্তমপুরের কৃষক খোকন মিয়া ২৫ শতক জমিতে আম জুপি বেগুন, উচাখিলা ইউনিয়নের মরিচার চর গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম ৩০ শতক ও আনোয়ার হোসেন ২৫ শতক জমিতে শিং নাথ জাতের লাফা বেগুন চাষ করে। তারা প্রত্যেকেই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

সবজির অস্বাভাবিক দর পতন আর্থিক ক্ষতির মুখে চাষিরা

উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাক আহাম্মদ জানান, উপজেলার সর্বত্রই সবজি চাষীর সংখ্যা বেড়েছে। চাষীরা কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবজি আবাদ করায় এবার সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। এজন্যই মূল্য হ্রাসের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, উপজেলায় যদি হিমাগারের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে চাষীরা এতো আর্থিক লোকসানের সম্মুখীন হতো না।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রিপা রানী চৌহান জানান, শসা এবং বেগুনের উৎপাদন একই সময়ে হওয়ায় বাজারে আমদানি হয়েছে প্রচুর। ফলে শসা বেগুন চিচিঙ্গা চাষিরা ন্যায্য বাজারদর থেকে বঞ্চিত হয়ে আর্থিক লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন। তবে এসব কৃষকদের পরবর্তী কৃষি আবাদের মাধ্যমে ক্ষতি পোষানোর ব্যাপারে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *