ঈশ্বরগঞ্জে ইউপি ভবনের বেহাল অবস্থা চেয়ারম্যান বসেন বাজারে

ঈশ্বরগঞ্জে ইউপি ভবনের বেহাল অবস্থা চেয়ারম্যান বসেন বাজারে

ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ইউপির দ্বিতল ভবনের নিচতলার একটি কক্ষ জোড়াতালি দিয়ে ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের কাজ চলছে। ভবনের প্রতিটি দরজা ও জানালা ভাঙাচোরা। বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। বসার কক্ষগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। মেঝেতে অসংখ্য ফাটল। কয়েকটি কক্ষের জানালার লোহার গ্রিল চুরি হয়ে গেছে। শৌচাগার নষ্ট। এ অবস্থা ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবনের।

এ পরিস্থিতিতে ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. আবদুল আলী ফকিরসহ ইউপি সদস্যরা কার্যালয়ে বসতে পারছেন না। গত ২৮ মার্চ শপথ গ্রহণের পর থেকে তাঁরা ভাড়া নিয়ে কাছের বাজারের একটি ঘরে বসছেন।

মুঠোফোনে কথা হলে চেয়ারম্যান আবদুল আলী ফকির বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। কিন্তু পরিষদ ভবন যদি ব্যবহারের অনুপযোগী থাকে, তাহলে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে লোকজন সেবা নিতে কোথায় আসবেন? আমি তো ইউপি ভবনের বর্তমান অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে পড়েছি। এ ভবন তো এক দিনে খারাপ হয়ে যায়নি। তাহলে বুঝুন, এ ভবনে ইউপির কাজকর্ম আগে কীভাবে চলেছে।’

চেয়ারম্যান বলেন, তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারণে সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে।

আবদুল আলী ফকির আরও বলেন, ‘ইউপি ভবনের কোনো কক্ষই বসার উপযুক্ত নয়। নানা সমস্যা নিয়ে বাসিন্দারা চেয়ারম্যানের কাছে আসছেন। তাই মানুষের কথা শোনার জন্য পাশের শাহগঞ্জ বাজারে একটি ঘর নিয়ে বসছি। ইউএনও মহোদয়কে ভবনের কথা বলার পর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) কার্যালয় থেকে কর্মকর্তারা এসে ভবনটি পরিদর্শন করে গেছেন।’

সরেজমিনে দেখা যায়, ইউপির দ্বিতল ভবনের নিচতলার একটি কক্ষ জোড়াতালি দিয়ে ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের কাজ চলছে। ভবনের প্রতিটি দরজা ও জানালা ভাঙাচোরা। দরজার ভাঙা পাল্লাগুলো বিভিন্ন কক্ষে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। কয়েকটি কক্ষের জানালার লোহার গ্রিল চুরি হয়ে গেছে। শৌচাগার নষ্ট হয়ে গেছে। বিদ্যুতের তার দেয়াল থেকে খুলে পড়েছে। মেঝেতে অসংখ্য ফাটল দেখা দিয়েছে। উইপোকা মাটি তুলে মেঝেতে স্তূপ জমিয়ে ফেলেছে। নথিপত্র রাখার আসবাব ভেঙে পড়ে রয়েছে।

ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘একটি কক্ষ জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করে মানুষকে সেবা দিচ্ছি। এ কক্ষেই জমিজমার গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র রাখতে হচ্ছে। পুরো ভবন সংস্কার না করে অন্য কক্ষগুলো কোনোমতেই ব্যবহার করা যাবে না। ভবনের দুরবস্থার কারণে রাজীবপুর ইউপিতে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম নেই। যদিও গ্রাম আদালতের সাইনবোর্ড ভবনের সামনের চত্বরে রয়েছে।’

ইউপি ভবনের পাশে ঘাঘড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আবু তাহের (৫৫) বলেন, ‘সরকারের কাজ যে ভবন থেকে পরিচালিত হবে, সেখানে আমাদের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যদি বসতে না পারেন, তাহলে হাজারো বাসিন্দা নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সেবা পাওয়ার জন্য কোথায় যাবেন?’

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. হাফিজা জেসমিন গত শনিবার বলেন, এ ধরনের একটি ভবন অল্প সময়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হতে পারে না। ভবন ঠিকঠাক রাখার দায়দায়িত্ব জনপ্রতিনিধিদেরও রয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পুরোনো ইউপি ভবন সংস্কারের জন্য প্রাক্কলন চাওয়া হয়েছে। উপজেলা এলজিইডি প্রাক্কলন চূড়ান্ত করার কাজ করছে। পরে সেটি চূড়ান্ত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। বরাদ্দ আসার পর ভবন সংস্কারের কাজ হবে।

সূত্রঃ প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *