ঈশ্বরগঞ্জে নারীর আত্মহত্যা

ঈশ্বরগঞ্জে নারীর আত্মহত্যা

ডেস্ক নিউজঃ পারিবারিক কলহের জেরে পুত্রবধূ ও নাতির সঙ্গে রাগ করে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মোছা. হাছনা আক্তার (৬৫) নামে এক নারী। আজ (০৯ অক্টোবর) সোমবার দুপুরে পৌর এলাকার কাকনহাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই নারী মৃত হারিছ মিয়ার স্ত্রী।

নিহতের স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পৌর এলাকার কাকনহাটি গ্রামে প্রায় বিশ বছর পূর্বে জায়গা কিনে বাসা করে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েসহ মাকে নিয়ে বসবাস করছেন রফিক মিয়া। ঘটনার দিন সকালে রফিকের স্ত্রী মোছা. আমেনা আক্তারের সঙ্গে ঝগড়া লাগে হাছনা আক্তারের।

এর এক পর্যায়ে সেই ঝগড়া গিয়ে গড়ায় রফিকের ছেলে রাফির (১৪) সঙ্গে। পরে ছেলে রফিক ফোন করে বিষয়টি মিটমাট করে দিলে নিজ ঘরে চলে যান হাছনা। এর একটু পর নিজের ঘরের ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁছিয়ে আত্মহত্যা করে হাছনা।

তবে নিহতের দুই মেয়ে কুলছুমা আক্তার (৩২) ও সাথী আক্তারের (৩৫) দাবি তাঁদের মাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার অভিযোগ নিহতের পূত্রবধূ আমেনার বিরুদ্ধে।

কুলছুমা আক্তার ও সাথী আক্তার জানান, তাঁদের বড়ভাই রফিক মিয়ার সাথে ১৯ বছর পূর্বে বিয়ে হয় আমেনার। বিয়ের পর থেকেই শাশুড়িকে সহ্য করতে পারছিলেন না পুত্রবধূ আমেনা। প্রায় সময়েই তাঁদের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি লেগেই লাগতো। যে কারণে আট বছর পর্যন্ত ছেলের বাসায় না থেকে তাঁদের দু’বোনের কাছে ছিলেন তাঁদের মা। এ অবস্থায় গত কিছুদিন আগে ছেলের বাসায় আসেন হাছনা।

এ অবস্থায় ঘটনার দিন সকালেও দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। পরে তাঁর দুই মেয়েকে হাছনা আক্তার ফোন দিয়ে জানায় তাঁকে আমেনা আক্তার মারধর করেছে। এর কিছু সময় পর তাঁরা খবর পান তাঁর মা মারা গেছে। এরপর বাসায় এসে দেখেন হাছনা আক্তারের নিথর দেহ খাটের উপর পড়ে আছে। নিহত হাছনা আক্তারের দুই মেয়ের দাবি, তাঁদের মা দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ ছিলেন। এ অবস্থায় মারধরের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

তবে এ বিষয়গুলো অস্বীকার করে আজকের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অভিযুক্ত আমেনা খাতুন জানান, আজকে সকালে ছোট একটা বিষয় নিয়ে দুজনের মধ্যে অল্প ঝগড়া হয়। এরপর তিনি তাঁর স্বামীকে বিষয়টা জানাতে ছাদের ওপর ফোনে কথা বলতে যায়।

এর একটু পরে ৪ বছর বয়সী ছোট মেয়ে তাঁকে গিয়ে জানায় যে তাঁর শাশুড়ি চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে ফ্যানের সাথে কি যেন করছে। পরে তিনি নিচে দৌঁড়ে এসে দেখে ওড়না প্যাঁছানো অবস্থায় শাশুড়ির মরদেহ ঝুলছিল। পরে তাঁর ১০ বছর বয়সী ছেলে রাফিকে নিয়ে দা দিয়ে ওড়না কেটে নিচে নামায়। অবশ্য ততক্ষণে তিনি মারা যান।

মায়ের মৃত্যুের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আমেনার স্বামী রফিক জানান, আমার মা খুবই রাগী ছিল। ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে আমার স্ত্রী-সন্তানের উপর চড়াও হতেন তিনি। মাঝে-মধ্যে দা দিয়েও কুপাতে যেতেন। আজকে সকালের ঝগড়া-ঝাটির সময় মায়ের সঙ্গেও কথা হয়েছে। বউয়ের সঙ্গেও হয়েছে। বিষয়টি আমি মিটমাটও করে দিয়েছিলাম। পরে জানতে পারলাম আমার মা গলায় ফাঁস দিয়েছে।

এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পিএসএম মোস্তাছিনুর রহমান বলেন,’ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহের সুরতহাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। পরিবারের পক্ষ থেকে কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *