সুদের লাভ না দেওয়ায় ঘরে আটকিয়ে নির্যাতনে আটক ১

ডেস্ক নিউজঃ ‘চাচা আমি গরীব মানুষ। আমি আর টাকা দিতে পারবো না, আপনার দুপায়ে ধরে বলছি আমারে মাফ কইরা দেন। লাভসহ সুদের টাকা পরিশোধ করার পরও সুদের কারবারি নুরু মিয়ার চাপিয়ে দেওয়া লাভের অতিরিক্ত টাকা দিতে না পেরে এভাবেই কাকুতি মিনতি করেন দিনমজুর আব্দুস সাত্তার (৪০)।

১৫ দিন আগে সুদের কারবারিকে বাড়িতে এনে পা ধরে ক্ষমা চাইলেও মন গলেনি সুদ খোর নুরু মিয়ার। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিনমজুর সাত্তার বাড়ির পাশে সুটিয়া বাজারে চা খেতে আসলে নূরু মিয়া তার সুদের কারবার পরিচালনা করার চেম্বারে সাত্তারকে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে তার ছেলে আনিস মিয়াকে সাথে নিয়ে সাত্তারকে ঘরে আটকিয়ে বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে।

খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন এসে পিটুনিতে বাঁধা দিলে তাদেরকেও মারধর করে নূরু মিয়া ও তার ছেলে। এসময় পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ সাত্তারকে উদ্ধার করে এবং ঘটনাস্থল থেকে নূরু মিয়ার ছেলে আনিস মিয়াকে আটক করে। এসময় পালিয়ে যায় সুদ খোর নূরু মিয়া। বৃহস্পতিবার আনুমানিক সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের সুটিয়া বাজারে এমন ঘটনাটি ঘটে।

ঘটনার রাতেই আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী পারভীন আক্তার বাদী হয়ে সুদ খোর নূরু মিয়াকে প্রধান আসামি করে তিন জনের নাম উল্লেখ করে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। সুদ খোর নুরু মিয়া ওই ইউনিয়নের সুটিয়া বাশাটি গ্রামের মৃত দানেশ মিয়ার ছেলে।

ভুক্তভোগী পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিগত ছয়মাস আগে সুদের কারবারি নুূরু মিয়ার কাছ থেকে দিনমজুর আব্দুস সাত্তার সংসারের কাজের জন্য সুদ হিসেবে ৯০ হাজার টাকা নেন। সেই টাকার সুদ হিসেবে জোড় পূর্বক দৈনিক ৯০০ টাকা লাভ নিতেন নূরু মিয়া। এভাবে আসল ৯০ হাজার ও সুদ হিসেবে ১লাখ ৬২ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা আদায় করে নূরু মিয়া। তারপরও সাত্তারের কাছে আরও সুদের টাকা দাবি করলে সাত্তার নিরুপায় হয়ে ক্ষমা চান। কিন্তু সুদের কারবারি নূরু মিয়ার টাকা আরও লাগবেই। তাই সাত্তারকে ডেকে এনে ঘরে আটকিয়ে চালায় নির্যাতন।

খবর পেয়ে সাত্তারকে উদ্ধার করে পুলিশ। সেই সাথে সুদ খোর নুরু মিয়ার ছেলেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে বিষয়টি নিয়ে সাত্তারের স্ত্রী পারভীন আক্তার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় শুক্রবার দুপুরে আটককৃত আনিস মিয়াকে কোর্টে প্রেরণ করা হয়।

ভুক্তভোগী আব্দস সাত্তার বলেন, আমি গরীব মানুষ। দিন আইন্যা দিন খাই। অভাবের তাগিদে সুদে টাকা আইন্যা লাভসহ পরিশোধ করার পরও আমাকে আরও টাকা দিতে বলে। কিন্তু আমার সামর্থ্য না থাকায় আমি চাচার পাও ধরে মাফ চাইলেও ক্ষমা করেনি। আমাকে বাঁশের লাডি দিয়া পিটািইয়া ও এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মাইরা আমাকে শেষ করে দিছে। আমার কেউ নাই। আমি এর সঠিক বিচার চাই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুদের কারবারি নূরু মিয়ার মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। যে কারনে তার সাথে কথা যায়নি।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ মাজেদুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে এক সুদের কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। আহত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *