মৃত্যুকূপের

‘মৃত্যুকূপের’ সামনে খেলছে শিক্ষার্থীরা!

ডেস্ক নিউজঃ ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার শিমরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঝুঁকি নিয়ে খেলছে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের পাশেই রয়েছে পুকুর ও রেল লাইন। তবে নেই সীমানা প্রাচীর। যে কারণে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আতঙ্কিত শিক্ষক ও অভিভাবকরা। শিগগিরই সীমানা প্রাচীর নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্কুল মাঠের ভেতর দিয়েই ওই এলাকার হাজারও মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা। সময়ে সময়ে এই রাস্তা দিয়েই চলে মোটরসাইকেল, ইজিবাইকসহ ব্যাটারিচালিত ছোট ছোট যান। এতেও দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। এদিকে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে অভিভাবকরা আতঙ্কে দিন কাটান। অপরদিকে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৫০ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৭৩ সালে সরকার স্কুলটি জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে এখানে ৭জন শিক্ষিকা কর্মরত রয়েছেন। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিকসহ স্কুলের ৬টি শ্রেণিতে মোট ১৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী দ্রুত পুকুর ভরাট ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

আল-নাঈম বাপ্পিসহ কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ‘শিশুরা কখন যে পুকুরে বা রেললাইনে পড়ে যায়, সে ভয়ে থাকি।’

কথা হয় বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সাজিমের সাথে। সে জানায়, টিফিনের সময় স্কুল মাঠে খেলতে যেতে ভয় হয় তার। একই শ্রেণির শিক্ষার্থী সোহাগের ভাষ্য, ‘ট্রেনের শব্দ শুনে অনেকেই ট্রেন দেখতে যায়। নিজের থেকে আমাদের ছোট ক্লাসের ভাইবোনের নিয়ে বেশি ভয় হয়।’

স্থানীয় মনির উদ্দিন ও বায়েজিদ হাসান বলেন, শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে কিংবা অফিস কক্ষে থাকাকালে শিশুরা ছুটোছুটির সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা সবসময় থাকে। স্কুলের পাশেই রেললাইন ও স্কুল মাঠের রাস্তা দিয়ে ছোট যান চলাচল করে। এতেও দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে পুকুর ভরাট করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

স্কুলের সহকারী শিক্ষক ইতি রাণী চক্রবর্তী জানান, ছেলেমেয়েরা ছুটোছুটি করতে গিয়ে কখন পুকুরে পড়ে যায় এনিয়ে সারাক্ষণ ছাত্রছাত্রীদের নজরদারিতে রাখতে হয়। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে ছাত্রছাত্রীরা ধাক্কাধাক্কি করলেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এমতাবস্থায় পুকুর ভরাট ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজিয়া সুলতানা বলেন, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। সীমানা প্রাচীর নির্মাণের আশ্বাস পেলেও পুকুর ভরাটের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নীলুফার হাকিম বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়কে সীমানা প্রাচীরের আওতায় আনা হচ্ছে। স্কুলটির তিনপাশে বাউন্ডারি আছে, কিন্তু পুকুর ও রেল লাইনের পাশে সীমানা প্রাচীর নেই। এই পাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য বেশ কয়েকবার মাপজোক করা হয়েছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি পুকুরে স্কুল, রেল ও ব্যক্তি মালিকানারও জমি রয়েছে। যে কারণে চেষ্টা করেও ওই পাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা যায়নি। এ ছাড়া পুকুর ভরাটের ক্ষেত্রে আইনগতও কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে স্থানীয় লোকজন, জনপ্রতিনিধি, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্টদের আলোচনা করে উল্লিখিত সমস্যা সমাধান করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. হাফিজা জেসমিন বলেন, স্কুলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের বিষয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। পুকুর ভরাটের ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষকের কেউ বিষয়টি জানায়নি, তাদের আরও আন্তরিক হতে হবে। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *